স্বদেশ ডেস্ক:
সালেহা বেগম (ছদ্মনাম)। বয়স ৭২ বছর। পেটব্যথা। ওষুধ খান যখন পেটে ব্যথা ওঠে। ওষুধে ব্যথা কমে বলে তেমন আমল দেন না। ভালোই চলছিল। সময় পার হতে থাকল। দিন যত পার হতে থাকল, ব্যথার তীব্রতা তত বাড়তে থাকল। ওষুধে আর কাজ হচ্ছিল না। ব্যথাও কমছিল না। সঙ্গে নতুন উপসর্গ যোগ হয়েছে। যেমনÑ জ্বর, বমি ও বমি ভাব। জ্বর, যা ব্যথার সঙ্গে যোগ হলো। প্রচ- জ্বর আসে। কাঁপুনি থাকে। কয়েক ঘণ্টা থাকে। এরপর ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে। প্রথমদিকে ৫/৬ মাস পর পর ব্যথা হতো। ব্যথার সঙ্গে জ্বর আসত। দিন যত যেতে লাগল, অসুখের তীব্রতা তত বাড়তে লাগল। এখন প্রতিমাসে মাসে ব্যথা হচ্ছে। প্রতিমাসে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা গেল পিত্তথলিতে পাথর।
লিভার ফাংশন টেস্ট, সিটি স্ক্যান, এমআরসিপিসহ আরও কিছু পরীক্ষা করা হলো। এসব পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটির বর্তমান অবস্থা জানা গেল। ক্যানসার আছে কিনা, সে জন্য আলট্রাসনোগ্রাফি ও সিটি স্ক্যান রিপোর্টের মাধ্যমে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেল। রোগীর শারীরিক অবস্থা নির্ণয়ে এবং অপারেশনের উপযোগী কিনা, তা জানার জন্য আরও কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হলো। সব কিছু জানার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো সার্জারি করতে হবে। সার্জারির সময় দেখা গেল, পিত্তথলি পাথরে ভর্তি। তবে পেটে অতিমাত্রায় পানি, যা আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে সামান্য বলে উল্লেখ ছিল।
পেটের পেরিটোনিয়ামে মসুরের দানার মতো অসংখ্য গুঁটি, যা প্রাথমিকভাবে মনে হবে পেরিটোনিয়াল সিডলিং, সাধারণত সেকেন্ডারি ক্যানসার বলে ধারণা করা হয়। পিত্তথলি কেটে ফেলা হয়েছে। পেরিটোনিয়ার টিস্যুর অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। দুটোই একত্রে বায়োপসি করা হলো। পিত্তথলির রিপোট ক্যানসার, যা একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে বলা যায়। পেরিটোনিয়াল টিস্যুতে ক্যানসার প্রমাণিত হলো। সাধারণ অবস্থার ব্যতিক্রম। এমন অবস্থার নাম এডভান্স ক্যানসার বা চতুর্থ স্টেজ। সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় রোগীর মুখে হাসি। বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। তবে সমস্যা দেখা দেবে। দ্রুত রোগীর খারাপ অবস্থা হবে।
রোগীকে পরবর্তী কেমোথেরাপি নিতে হবে। ফল সন্তোষজনক নাও হতে পারে। পিত্তথলির ক্যানসারে সাধারণত শুরুতেই নির্ণয়ের হার খুব কম। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যানসার যখন পিত্তথলির চারটা স্তরের প্রথম স্তরে থাকে, তখন যদি ধরা পড়ে, তবে সফলভাবে সার্জারি করা যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এ পর্যায়ে রোগ ধরা পড়ে খুব কম। আমাদের দেশের বাস্তবতা আরও খারাপ। এ ধরনের রোগীরা সাধারণত কুপরামর্শের শিকার হয়ে থাকেন। তাই সফলতা পাওয়া কঠিন।